জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজার
রাজশাহীর আমের সুনাম দেশ জুড়ে। সেই আম এখন বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে জমে উঠেছে আমের বিকিকিনি। পাইকার আর ক্রেতার ভিড়ে মুখর আমের মোকামগুলো। তবে গাছ থেকে আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়ায় আম চাষিদের একাংশ খুশি হলেও অন্যরা ক্ষুব্ধ।
প্রাকৃতিকভাবে আম পাকার প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার জন্য গত বছরের মতো এ বছরও ২৫ মে পর্যন্ত গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাত করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে অপরিপক্ক আম কৃত্রিম উপায়ে পাকানো ও বাজারজাতকরণের প্রবণতা রোধে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
রাজশাহীর জুট মিল বাগানের মালিক হায়দার আলী জানান, সময় বেধে দেওয়ায় গত বছর জুনে তাদের আম পাড়তে হয়েছিল। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এবার কিছুটা সময় এগিয়ে দেওয়ায় ভালো হয়েছে। জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকে আম পাড়তে পারলে আরও ভালো হতো।
একই সুরে কথা বললেন রাজশাহীর অন্য চাষিদের। আমের সুনাম রক্ষায় গত দুই বছর থেকে স্থানীয় প্রশাসন গাছ থেকে আম নামানোর দিনক্ষণ ঠিক করে দিচ্ছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, রাসায়নিক মিশ্রিত আম বাজারজাত প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন নানা সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম চালিয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৮০০ কেজি আম ধ্বংস করা হয়েছে। জুনের মাঝামাঝি সব জাতের আম বাজারে পাওয়া যাবে। তবে এ অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অপরিপক্ক আম ঝরে পড়ায় এ বছর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমের উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ বাগান মালিক তাদের বাগান এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে লিজ দিয়েছেন। এ অঞ্চলে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২২ লাখ ৮২ হাজার ৯৩০টি আমগাছ রয়েছে। গত বছর ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ২০ লাখ গাছ থেকে ২ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। এ অঞ্চলে ল্যাংড়া, ফজলি ও খিরসাপাতসহ ১৫০ প্রজাতির সুস্বাদু আম উৎপাদিত হয়।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর বাজার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে আমের কেনাবেচা। পাইকাররা আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। বাজারে উঠেছে নানা জাতের আম। দামও খুব বেশি নয়। ইতিমধ্যে গুটি, লকনা, খিরসা, গোপালভোগ জাতের আম বাজারে এসেছে।
বানেশ্বর হাটে আসা দুর্গাপুরের ঝালুকা এলাকার আমচাষি রাকিবুল ইসলাম জানান, এক সঙ্গে বাজারে কয়েক জাতের আম আসায় দাম কম। এভাবে সময় বেধে দেওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সানপুকুরিয়ার আমচাষি সান্টু জানান, সময় বেধে দেওয়ার ফলে পরিপক্ক আম বাজারে আসছে। এতে ক্রেতারা লাভবান হবেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন গাছ থেকে আম পাড়ার যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে তা আরেকটু এগিয়ে দিলে ভালো হয়।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিম উদ্দিন জানান, আমের বিভিন্ন জাতের মধ্যে পাকার সময়ের পার্থক্য আছে। ফলে দিনক্ষণ ঠিক করে আম পাড়তে হলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এবার তীব্র খরা ও গরমের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পরিপক্ক হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ফরমালিন প্রতিরোধে ইতিমধ্যে তারা চাষিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। চাষিরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এবার কোনও ফরমালিন আতঙ্ক থাকবে না। কেউ ফরমালিন ব্যবহার করলে তারাই স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেবে। ফলে দেশের মানুষ ফরমালিনমুক্ত রাজশাহীর আম পাবেন।
গোপালভোগ ও গুটি আম ছাড়াও অন্য জাতের আমেরও সময়সীমা আছে। জাতীয় কৃষি উদ্যানতত্ত্বের হিসাব মতে, খিরসাপাত ও হিমসাগর আম ১ জুন, ল্যাংড়া ও বোম্বাই ১০ জুন, ফজলি ২৫ জুন, আম্রপালি ১ জুলাই এবং আশ্বিনা ১৫ জুলাই থেকে বাজারজাতকরণ করতে পারবে চাষিরা।
নগরীর শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশরারফ হোসেন বলেন, গোপালভোগ ২ হাজার ৪০০, রানী প্রসাদ ২ হাজার, খিরসাপাত ২ হাজার, গুটি আম ৮০০ থেকে ১ হাজার ও লকনা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচারক দেব দুলাল ঢালি বলেন, গত বছর থেকে রাজশাহীর আম বিদেশে রফতানি শুরু হয়েছে। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদন করে রফতানি উপযোগী করা হচ্ছে। এবার রাজশাহীতে প্রায় এক লাখ আম ব্যাগিং করা হয়েছে। রাজশাহী থেকে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন আম সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে রফতানি হবে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৮২৫ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি হয়েছিল। এবার তার দ্বিগুন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বরের আম ব্যবসায়ী মুঞ্জুর রহমান বলেন, গত তারা দুই টন আম সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে ভাল সাড়া পাওয়া গেছে। এবার ১৫ টন আম বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য ৫০ হাজার খিরসাপাত, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া ও ফজলি আম ব্যাগিং পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
Comments
- No comments found
Leave your comments