আমের রাজ্য বানেশ্বর
আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহীতে জমে উঠেছে আমের বাজার। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বরে এখন প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হচ্ছে। দেশের গ-ি পেরিয়ে রাজশাহীর আম যাচ্ছে ইউরোপেও। এ বছর আমের দাম স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। স্থানীয় আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীতে প্রায় ১৫০ প্রজাতির আম উৎপাদিত হয়। আমের রাজ্য বানেশ্বরের হাটে লখনা, ক্ষীরশা, গোপালভোগ, গুটি জাতের আম এসেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর বাজার। এ হাটে প্রায় ১৫০টি আমের আড়ত আছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে আমের বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এখানে আসেন আম কিনতে। আর প্রতিদিন রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আম বিক্রি করতে বানেশ্বর হাটে আসেন বিক্রেতারা। বর্তমানে বাজারে লখনা আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়, ক্ষীরশা ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, গোপালভোগ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায়, গুটি আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার রাজশাহীতে দুই দফা বড় ঝরে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আশা করছিলেন আমের দাম চড়া হবে। কিন্তু দাম স্বাভাবিক থাকায় কিছুটা হতাশ ব্যবসায়ীরা। বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। বড় ব্যবসায়ীরা ও কোম্পানি এসে এখান থেকে আম কেনেন। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয় এ হাটে। আম বিক্রেতা হামিদুর রহমান বলেন, আমের বাজার শুরুতে চড়া ছিল। রোজার শুরু থেকে আমের আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম। বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী মুঞ্জুর রহমান বলেন, গেলবার তারা ২ টন আম সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। এবার ১৫ টন আম বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য ৫০ হাজার ক্ষীরশাপাত, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া ও ফজলি আম ব্যাগিং পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী আলোকিত বাংলাদেশকে জানান, জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এবার আম এসেছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৮০ গাছে। এসব গাছ থেকে ২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গেল বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। এবার কৃষি বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও আমচাষির সমন্বয়ে আম নামানোর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। ১৫ মে থেকে গোপালভোগ ও গুটি, ২৫ মে থেকে হিমসাগর ও লখনা জাতের আম নামানো শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, ৮ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১০ জুন থেকে ফজলি, ২০ জুন থেকে আম্রপালি এবং ১৫ জুলাই থেকে আশ্বিনা আম নামাতে পারবেন চাষি। গেল বছর থেকে রাজশাহীর আম বিদেশেও রফতানি শুরু হয়েছে। ওই বছর মাত্র ৩০ মেট্রিক টন আম রফতানি করা হয়। তবে এবার চীন ও ইউরোপে ১০০ মেট্রিক টন আম রফতানির টার্গেট নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। উন্নতমানের আম রফতানি করতে বেশকিছু বাগানে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি।
Comments
- No comments found
Leave your comments