ল্যাংড়া আম ভাঙতে হবে ৩০ মে
গত বছর মেহেরপুর থেকে ইউরোপ মহাদেশে হিমসাগর আম রপ্তানি করা হয়েছিল ১২ মেট্রিক ট্রন। আর এ বছর জেলা থেকে ওই জাতের আম রপ্তানি করা হবে ২০০ মেট্রিক টন। মেহেরপুরের হিমসাগর আম দেশের সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু হওয়ায় ইউরোপিও মহাদেশে ক্রমেই এর চাহিদা বেড়ে চলেছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলেও মেহেরপুরের হিমসাগর আমের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। ফলে হিমসাগর আমের মাধ্যমে মেহেরপুর আমের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে চিহিৃত হচ্ছে। এটিকে ধরে রাখতে হলে সঠিক সময় আম বাজারজাত করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে নিরাপদ আম বাজারজাত করণ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ মতামত প্রকাশ করেন । মতবিনিয়ম সভা শেষে জাত ভেদে মেহেরপুরের ভৌগলিক আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে আম বাজারজাত করার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ’র সভাপতিত্বে মতবিনিয়ম সভায় আম সংরক্ষন, পরিবহন, গুনগত মান নির্ধারন নিয়ে আলোচনা করেন চাপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষনা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরাফ উদ্দিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, বারাদি হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক জাহিদুল আমিন, সদর উপজেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা স্বপন কুমার সাহা, আম ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন খান, আমচাষী আব্দুল কুদ্দুস, হারুণ অর রশিদ প্রমুখ। ড. শরাফ উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, একটি পরিপক্ক আম পানিতে ভাসে না, সেটি পানিতে ডুবে যাবে। আম পরিপক্ক হলে তার রঙ, গুনগত মান ও স্বাদ সবকিছুই ভালো হবে। দেশ ও বিদেশের বাজারে তার মূল্যমানও ভাল হবে। ড. শরাফ উদ্দিন বলেন, একটি আমের ওজন প্রতিদিন ৫ গ্রাম করে বাড়তে থাকে। ফলে পরিপক্ক না করে আম বাজারজাত করা হলে আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তিনি বলেন, আবহাওয়ার তারতম্য ভেদে একেক অঞ্চলের একেক সময় আম বাজারজাত শুরু হয়ে থাকে। মেহেরপুরের ভৌগলিক আবহাওয়ার তুলনা করে গোপালভোগ আম ১৫ মে, হিমসাগর আম ২০মে, ল্যাংড়া আম ৩০ মে থেকে বাজারজাত করা হলে সঠিক ওজন ও স্বাদ বজায় থাকবে। তিনি আমব্যবসায়ী ও চাষীদের এ নির্দেশনা মেনে চলার আহবান জানান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলায় ২ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ হচ্ছে হিমসাগর। এই হিমসাগর আমকে দেশের মধ্যে ব্রান্ডিং করার জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে। সেই হিসেবে গত বছর ১২ মেট্রিক টন হিমসাগর আম বিদেশে রপ্তানি হলেও এবছর তার কয়েকগুন বেড়ে ২০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হচ্ছে। আম ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন খান ব্যবসায়ী ও চাষীদের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ের ৫ দিন আগে আম বাজারজাত করণের দাবি করেন। তিনি বলেন, বয়স্ক গাছগুলোর আম কয়েকদিন আগে পরিপক্ক হয়। অল্প বয়সের আম পাঁকতে একুট সময় লাগে। আম ব্যবসায়ী, চাষী, কৃষি কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বক্তব্যর নির্দেশনার উপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম বাজারজাতের সময় নির্ধারণ করে দেন জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ। জেলা প্রশাসক বলেন, গোপালভোগ আম ১৫ মে, হিমসাগর আম ২০ মে, ল্যাংড়া আম ৩০ মে, ফজলি ১৫ মে, আ¤্রপালি জুনের শেষ সপ্তাহ, মল্লিকা ও বিশ্বনাথ জাতের আম জুলাইয়ের ১ম সপ্তাহ থেকে বাজারজাত করণের সময় নির্ধারণ করা হলো। তিনি বলেন, এর দু’একদিন আগে যদি কোন বাগানে আম পেকে যায় তবে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাকে আম ব্যবসায়ীরা জানাবেন। কৃষি কর্মকর্তারা ওই বাগান পরিদর্শন করে যদি দেখেন আম পরিপক্ক হয়েছে তাহলে তাদের মতামতের ভিত্তিতে আপনারা ওই বাগানের আম বাজারজাত করতে পারবেন। মতবিনিময় সভায় কৃষি কর্মকর্তা, আম ব্যবসায়ী, আমচাষীরা অংশগ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সেরের মাধ্যমে গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ওই এলাকার আমব্যবসায়ী ও চাষীরাও অংশগ্রহণ করেন।
Comments
- No comments found
Leave your comments