আমের দেশে একদিন
চলছে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে দেশের সবচেয়ে বড় আমের পাইকারী হাট দেখার শখ আমার অনেক দিনের। কিন্তু সময় আর সুযোগ করে যাওয়া হয়ে ওঠে না। হঠাৎ দুই দিনের ছুটি পেয়ে বন্ধুরা মিলে ট্রেনের টিকিট কেটে ফেললাম।
রূপন প্রস্তাব করল চাঁপাইনবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার। আমরা রূপনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। বৃষ্টি থামার অপেক্ষা না করেই রওনা হলাম ছোট সোনা মসজিদ দেখতে। ১৫ মিনিটে আমরা হাজির হলাম সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন হিসেবে খ্যাত ছোট সোনা মসজিদের সোনামাখা আঙিনায়। ২০ টাকার নোটের ওপর ছাপানো মসজিদটি দিয়েই শুরু হল আমাদের পরিভ্রমণ। মসজিদ প্রাঙ্গণের আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ২ শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল হকের সমাধি দেখে আমরা সোনা মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাঁয়ের একটি মেঠো পথ ধরলাম।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কিছুটা পথ হেঁটে একটি আম বাগানে ঢুকে পড়লাম। পাকা আমের মৌ মৌ ঘ্রাণে মন ভরে গেল। বিস্তৃত বাগানে চাষীরা গাছ থেকে আম পেড়ে ঝুড়িতে করে ভ্যানে নিয়ে হাটে যাওয়ার দৃশ্য দেখেই পুলকিত হলাম। বাগানের মালিকের সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষ হলে তিনি গাছ থেকে আম পেড়ে খাওয়ার অনুমতি দিলেন।
দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকাল। সকালে বৃষ্টি থাকায় বিকেলে একের পর এক আম বোঝাই ভ্যান আসতে থাকে কানসাট হাটে। উপর থেকে দেখলে পুরো বাজারটি সবুজ আর সবুজ। কানসাট বাজারে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত আমের হাট বসে। হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ফজলি, ক্ষিরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, সিন্দুরা, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, লক্ষণভোগসহ শত শত প্রজাতির আম বেচা-কেনা হয় এ হাটে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। ৪০ কেজিতে নয়, এখানে ৪৫ কেজিতে আমের মণ ধরা হয়। হাটের পাশে ছোট একটি দোকানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত কলাইরুটি খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আমরাও কিছু আম কিনলাম ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য। হাজার মানুষের আম কেনা-বেচার দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে টেরই পাইনি। রাতে বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই দমকা হিমেল হাওয়া ছেড়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমে এল।
কীভাবে যাবেন : ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছেড়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ পথের বাস সার্ভিস হল- মর্ডান এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, লতা পরিবহন, দূরদুরান্ত পরিবহন, এনপি পরিবহন ইত্যাদি। ভাড়া ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া ট্রেনে রাজশাহী নেমে লোকাল বাসে অথবা সারা দিনের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশপাশ।
কোথায় থাকবেন : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল আছে। শহরের শান্তি মোড়ে হোটেল আল-নাহিদ, আরামবাগে হোটেল স্বপ্নপুরী, লাখেরাজপাড়ায় হোটেল রাজ, একই এলাকায় হোটেল রংধনু। এ সব হোটেলে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকায় অবস্থান করা যাবে। এ ছাড়া জেলা পরিষদ ও সড়ক বিভাগের রেস্ট হাউসে রাতযাপন করতে পারবেন।
Comments
- No comments found
Leave your comments