রাজশাহীতে নিষিদ্ধ ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে৷ ব্যবসায়ীরা কাঁচা আমে কার্বাইড দিয়ে ঝুড়িতে ভরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন রাজশাহীর বাইরেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমে কার্বাইড ব্যবহারকারী এবং ফলটির ভোক্তা—উভয়েই ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝঁুকিতে পরতে পারেন।
নগরের তালাইমারীর বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান বলেন, গত শুক্রবার তিনি ৬০ টাকায় এক কেজি গোপালভোগ আম কেনেন৷ বাড়িতে গিয়ে কেটে মুখে দিয়ে দেখেন, আমের স্বাদ টক ও তেতো।
সরেজিমনে দেখার জন্য এই প্রতিবেদক এবং প্রথম আলোর রাজশাহীর আলোকচিত্রী একজন ব্যবসায়ীর পিছু নেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁর সঙ্গে কথা হয়। প্লাস্টিকের ঝুড়িতে কাগজ বিছিয়ে আম ভরা হচ্ছে৷ এক ঝুড়িতে ২০ কেজি আম ধরেতিনি সবকিছু দেখানোর জন্য রাজি হন। পরদিন শুক্রবার সকালে তাঁর কাছে গেলে তিনি বলেন, কার্বাইড বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। ভারত থেকে আসে। বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে তাঁর কার্বাইড আসছে। কার্বাইড এলে তিনি বাগানে যাবেন। এরপর বেলা ১১টা থেকে চার ঘণ্টা
অপেক্ষা করতে হলো। বেলা তিনটার দিকে একটি রিকশায় কার্বাইডের একটি থলে এল। সেই থলে নিয়ে দোকানের এক কর্মচারী পিকআপে করে রওনা দিলেন। ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদক ও আলোকচিত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে পুঠিয়ার বানেশ্বরে যেতে চেয়েছিলেন। হঠাৎ তিনি বললেন, সেখানে নয়, পবা উপজেলার বিল ধরমপুর গ্রামের এক বাগানে যাবেন। সেই বাগানের মালিকের নাম রাজীব। তিনি বাগান বিক্রি করে দিয়েছেন। তার পরও আম পাড়ার সময় দেখতে এসেছেন। বাগানে কিছু গোপালভোগ ও গুটি আমের গাছ রয়েছে। শুরু হলো আম পাড়া। সেগুলো বাগানের মাঝখানে একটি জায়গায় স্তূপ করা হচ্ছে। সেখানে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে আম ভরার সময় কর্মচারীটি ট্রাকে গিয়ে থলে থেকে কিছু কার্বাইড নিয়ে এলেন। ২০ কেজি আমের মধ্যে কার্বাইডের তিনটি পুরিয়া রাখলেই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেকে যায়এবার আমের স্তূপের পাশে বসে খবরের কাগজ ছিঁড়ে কার্বাইডের ছোট ছোট পুরিয়া বানানো হলো। ২০ কেজি আমের একটি ঝুড়িতে তিনটি করে পুরিয়া দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা বলেন, এই তিনটি পুরিয়ার গরমে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব কাঁচা আম পেকে যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহীতে ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন।
ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৈয়দ নূরুল আলম বলেন, ‘আমাদের দেশে ক্যালসিয়াম কার্বাইড নিষিদ্ধ৷ দেশে এর কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ভারত ও পাকিস্তানেও তাই।’ তিনি বলেন, ‘কার্বাইড অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি করে। এই অ্যাসিটিলিন শিখা দিয়ে ঝালাইয়ের কাজ করা হয়। এটা প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন করে। কার্বাইড মেশানো শেষে পিকআপে করে আম চলে যায় দেশের নানা প্রান্তেযারা আম পাকাতে কার্বাইড ব্যবহার করছে এবং যারা ভোক্তা—উভয়েই মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবে। দীর্ঘ মেয়াদে তাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝঁুকি থাকবে। আর ভোক্তাদের দুই ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। একদিকে তাঁরা স্বাস্থ্যঝঁুকিতে পড়েন, অন্যদিকে বেশি দামে আম কিনেও আমের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হন৷ কারণ, পুষ্ট হওয়ার আগেই কৃত্রিম উপায়ে পাকানোর ফলে আমের পুষ্টিমান থাকে না। এ জন্য এই আমের স্বাদ তেতো৷’ এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, যে আম যখন পাকার মৌসুম সে আম তখনই কিনতে হবে। অসময়ে খেতে গেলেই কৃত্রিমভাবে পাকানো আম খেতে হবে।