সাতক্ষীরায় আম বিক্রির বাজার শুরু সুস্বাদু হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপলি আমের সুখ্যাতি সারাদেশ ব্যাপী
সাতক্ষীরার সুস্বাদু হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপলি আমের সুখ্যাতি সারাদেশ ব্যাপী। আম বিক্রির বাজার শুরু হতেই তাই জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড় বাজারের বিভিন্ন আড়তে ভীড় জমাতে শুরু করেছে।
বিক্রেতা চাষি এবং আড়তদারও ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন আম বেচাকেনায়। বড় বাজারের আমের আড়তে গেলে চোখে পড়ে এই দৃশ্য। ভ্যানে করে ঝুড়ি ঝুড়ি আম নিয়ে আসছেন চাষিরা। ক্যারেট ভর্তি করছেন কেউ কেউ। কেউবা ব্যস্ত ট্রাক লোডে। আর লোড করা ট্রাক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বরাবরের মতো এবারও সবার আগে বাজারে উঠেছে সাতক্ষীরার আম। বড় বাজারের আমের আড়তে গিয়ে দেখা হয় রাজশাহীর আম ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলামের সঙ্গে। তার এলাকায় তিনি আমের ব্যবসা করেন। সাতক্ষীরায় এসেছেন আম কিনতে। শুনে অবাক হতে হলো। আমের দেশের মানুষ আপনি, সাতক্ষীরায় এসেছেন আম কিনতে? এমন প্রশ্নের উত্তরে, মুচকি হেসে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। সাতক্ষীরায় শেষ হলে রাজশাহীতে আম ভাঙ্গার সময় শুরু হয়। এখানে শুধু আমি নই, এই আড়তে আপনি বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুরসহ অন্যান্য জেলার লোকও পাবেন। সুলতানপুর বড় বাজারের আড়ত মালিক রওশন আলী জানান, আগামী ১৫ মে’র পর থেকে হিমসাগর আম পাওয়া যাবে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় চাষিরা এখন হিমসাগর আম ভাঙ্গছেন না। তবে এখন প্রচুর পরিমাণ গোবিন্দভোগ আম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যা বর্তমানে পাইকারী বাজারে ২২শ’ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন এই বাজারে আম কিনতে। বর্তমানে গোবিন্দভোগ কেনার পাশাপাশি ১৫ মে থেকে হিমসাগর আম কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ইতিমধ্যে বাজারের বিভিন্ন আড়তদারদের সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ী অগ্রিম চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন। তবে বাজারে সরবরাহ অনুযায়ী এবার আমের দাম নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি জানান। তবে, শুধু দেশের বিভিন্ন জেলায় নয়, ১৫ মে’র পর থেকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ইউরোপের বাজারে যাবে সাতক্ষীরার হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ বিভিন্ন জাতের সুস্বাধু আম। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আমের মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, আম্রপালি, মল্লিকা, সিঁদুররাঙা, ফজলি, কাঁচামিঠা, বোম্বাই ও লতাবোম্বাই উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ইতোমধ্যে বাজারে উঠেছে গোবিন্দভোগ। ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে হিমসাগর ও ২৫ তারিখের পর থেকে ল্যাংড়া ভাঙ্গা শুরু হবে। যদিও অনেক বাগানে হিমসাগর ভাঙ্গার সময় হয়েছে। কিন্তু ১৫ মের আগে হিমসাগর ভাঙ্গতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া রফতানির লক্ষে জেলার কলারোয়া উপজেলার ১০০টি, দেবহাটা উপজেলার ৪০টি, তালা উপজেলার ৮৭টি ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৫০টিসহ সর্বমোট ৩৭৭টি বাগান নির্বাচন করে বিশেষ পরিচর্চা করা হচ্ছে। এসব বাগানে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলছে বিষমুক্ত আম উৎপাদনের কার্যক্রম। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম গুণে, মানে ও স্বাদে অনন্য। এছাড়া মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে এখানকার বাগানের আম অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক আগে পাকে। তাই এর কদরও বেশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, আমে যাতে কেউ ক্যামিক্যাল না মেশায়, সেজন্য আম ভাঙ্গার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর আম ভাঙ্গলে তা পাকাতে ক্যামিক্যাল দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা এখন আমের ব্রান্ড। বিদেশে রফতানিসহ রাজধানীর বড় বড় শপিং মলে ব্রান্ডিং করে সাতক্ষীরার আম বিক্রি হয়। এবারও হবে। এজন্য প্রস্তুতি চলছে।
Comments
- No comments found
Leave your comments